সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিলামে উঠছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুনের ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক পণ্য নিলামে তোলার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিলামে তুলে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।

সোমবার (৬ জুন) বিকেল ৪টায় প্রকাশ্য নিলামে তুলে এসব রাসায়নিক বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড তুরস্ক থেকে চার বছর আগে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের চালানটি নিয়ে আসে। আমদানির পর প্রতিষ্ঠানটি সেগুলো খালাস করেনি। এরপর থেকে দুই কনটেইনারের চালানটি বন্দরের চত্বরে পড়ে আছে। চালানটিতে ৩০ হাজার ৪৫০ কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে। এই চালানের সংরক্ষিত দাম ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

কাস্টমসের উপকমিশনার আলী রেজা হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই কনটেইনারের চালানটি প্রকাশ্য নিলামে তোলা হবে। সংরক্ষিত দামের ১০ শতাংশ পে-অর্ডার বা নগদ টাকা দিয়ে আগ্রহীরা নিলামে অংশ নিতে পারবেন।

জানা গেছে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড টেক্সটাইল, ডাইংসহ নানা শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এই পণ্য একসময় আমদানি হলেও বর্তমানে রপ্তানি হচ্ছে।

এর আগে ২০২০ সালে লেবাননের বৈরুতের বন্দরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরে চট্টগ্রাম বন্দরও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস বা নিলামে তোলে বিক্রির জন্য। সরকারের নানা সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। কিছু পণ্য ধ্বংস করা হয়।

এরপর ওই নিলামের ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের একটি চালান প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। ওই চালানে ৩১৫ ড্রামে ২০ হাজার ৪৭৫ কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। মোট পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে এই রাসায়নিক বিক্রি করা হয়।

এদিকে শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত সাতজনকে রবিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন ফায়ার ফাইটার ও পাঁচজন বেসামরিক লোক রয়েছেন। নয় জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকার্তারা। এছাড়াও নিখোঁজ আছেন তিন জন।

আগুন ও বিস্ফোরণে নিহতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। চমেকে থাকা ১২টি লাশের মধ্যে কেবল একটি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি লাশ শনাক্ত করতে সোমবার সকাল থেকে ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হবে। ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখনও আগুন নেভাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দাহ্য পদার্থ নিয়ে লুকোচুরির কারণেই আগুন পুরোপুরি নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ডিপোতে থাকা কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ রয়েছে। কিন্তু কোন কনটেইনারে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে সেটা কারও কাছ থেকে জানা যাচ্ছে না। এ কারণেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। এদিকে রবিবার ডিপোর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনার ইঞ্জিনিয়ার কোর। তারাও সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন। চমেকে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। নগরীর অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালেও আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ভয়াবহ এই আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন দপ্তর এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে, জেলা প্রশাসন ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com